Latest Breaking

হলদিয়ায় শুরু হলো ফিশ ট্যুরিজম, নয়াচরকে যুক্ত করার ভাবনা

 

 
ঋভুব্রত সেনগুপ্ত, হলদিয়া  : আনুষ্ঠানিকভাবে হলদিয়া ফিশ ট্যুরিজমের পথ চলা শুরু হল। হলদিয়া শিল্প শহর নামে পরিচিত। কল-কারখানা দূষণ, এটাই হলদিয়ার নিত্যসঙ্গী। কিন্তু হলদিয়া ও তার আশেপাশে নয়াচরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রয়েছে। এ কারণে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে 2 নভেম্বর থেকে চালু হলো ফিশ ট্যুরিজম। পর্যটকদের বিভিন্ন ফিশারি ঘুরিয়ে দেখা হবে। জালে মাছ ধরার দৃশ্য তারা উপভোগ করতে পারবেন। কেউ চাইলে ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে পারে, সেই ব্যবস্থাও থাকছে ফিশ ট্যুরিজমে। 

 হলদিয়া গভরমেন্ট কলেজ এর পর্যটন বিভাগ, হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতি ব্লক মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে ২রা নভেম্বর  আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হল অভিনব মৎস্য ভ্রমন । ভ্রমন পিপাসু বাঙালীদের এই অভিনব উদ্যোগ ভাল লাগবে। এমন ফিশ ট্যুরিজম বিদেশে বহুল প্রচলিত হলেও আমাদের এখানে নতুন। তবে প্রাথমিক ভাবে ভার্চুয়ালি এই ভ্রমনের স্বাদ পাওয়া যাবে ।  আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুব্রত কুমার হাজরা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন হলদিয়া ব্লকের বিডিও সঞ্জয় দাস,  মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক সুমন কুমার সাহু, হলদিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পীযুষ কান্তি ত্রিপাটি , মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ গোকুল মাজি, সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বাড়উত্তরহিংলি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ওহাব আলি সহ কলেজের অধ্যাপকগন ও অন্যন্যরা । হলদিয়া ব্লকের বসানচক গ্রামের পেংবা, ডেকান রুই, আমুর মাছ চাষের খামারে এর শুভ উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন হলদিয়া ব্লকের মহিলা মাছ চাষি বন্দনা ভৌমিক। 

 জানা গিয়েছে, হলদিয়ার সঙ্গে নয়াচর কে ফিশ ট্যুরিজম-এ  যুক্ত করার ভাবনা রয়েছে। শিল্পের জন্য একসময় নয়াচরকে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু দূষণের কারণে শিল্প হয়নি। নয়াচর  প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি।  অসংখ্য ফিশারি। গঙ্গার মাঝে এই দ্বীপভূমি পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেবে। সপ্তাহের শনি/রবি ছুটির দিনে  হলদিয়া থেকে  লঞ্চে করে নয়াচর ঘুরিয়ে আবার বিকেলে ফিরে আসার  পরিকল্পনা রয়েছে এই ফিশ ট্যুরিজমে। কলকাতা বা দীঘা থেকে  হলদিয়া  পর্যটকরা যাতে সারাদিন  নয়াচর ঘুরে বিকেলে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তার জন্য ট্রেন ও বাস যোগাযোগকে কাজে লাগানো হবে। 

হলদিয়ার মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক সুমন কুমার সাহু বলেন,হলদিয়ার মাছের খামারের প্রাকৃতিক পরিবেশ একদিকে যেমন ভ্রমন পিপাসুদের মন ভরিয়ে দেবে তেমনি এলাকার মাছ চাষিরাও উদ্বুদ্ধ হবেন বেশি করে। সাধারন মানুষরাও মৎস্য ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে সহজে অবগত হবেন।
হলদিয়া গভরমেন্ট কলেজের প্রিন্সিপাল পীযুষ কান্তি ত্রিপাটি বলেন, আমাদের কলেজের পর্যটন বিভাগের পাঠরত ছাত্র ছাত্রিদের জন্য এটি এক নিতুন সম্ভাবনার দিক। ছাত্র ছাত্রিরা হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তরের সহায়তায় মৎস্য খামার পর্যটন  পরচালনা করবে। মৎস্য পর্যটন এবং ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা এক অন্যতম শিল্প। পর্যটন শিল্পে ঐতিহ্যগত কাজগুলি ছাড়াও এই রকম নতুন ধরনের উদীয়মান মৎস্য  ভ্রমণ  পর্যটন শিল্পে পেশাদারদের কর্মজীবনের সুযোগের জন্ম দেবে ।
মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ গোকুল মাজি বলেন, রাজ্যে এমন অভিনব মৎস্য পর্যটন হলদিয়াতেই প্রথম আমরা করলাম। এই মৎস্য পর্যটনের মাধ্যমে ভ্রমন পিপাসুরা যেমন এমন প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ পাবেন তেমনি বৈচিত্রময় মাছ দেখতে পাবেন যেটা সারা রাজ্যে নজির।
হলদিয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুব্রত কুমার হাজরা বলেন, অভিনব এই উদ্যোগে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হবে। সরকারি উদ্যোগ প্রকল্পের রূপায়ন ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। হলদিয়ার বিডিও সঞ্জয় দাস বলেন, হলদিয়ার মৎস্য ক্ষেত্র পর্যটন এই উদ্যোগে কর্মমুখী উন্নয়ন হবে।

এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা শ্রমিক নেতা প্রকৃতিপ্রেমী তাপস মাইতি জানান, এটা খুব ভাল উদ্যোগ। আমরা সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত। সিপিএমের জেলা সম্পাদক, নিরঞ্জন সিহি জানান, দীর্ঘদিন ধরে নয়াচর অবহেলিত, যে কাজ সরকারের উদ্যোগ নেয়ার কথা ছিল, সেখানে কোন বেসরকারি সংস্থা যদি এগিয়ে আসে এর থেকে ভালো কিছু হতে পারেনা।
কলকাতা বিরাটির বাসিন্দা পেশায় আইনজীবী রত্না হালদার বলেন, দীঘা বেড়াতে গেলে একদিনের বেশি কিছু দেখার থাকেনা। সেখানে দীঘার কাছাকাছি  হলদিয়া নয়াচরের অনেক নাম শুনেছি। দেখার কৌতুহলও আছে, সুযোগ হয়নি। ফিশ ট্যুরিজম এর মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে নয়াচরকে তুলে ধরলে আমার মত অনেক পর্যটকই আকৃষ্ট হবেন।

বেশ কিছু বছর ধরে শিল্প ও বন্দর শহর হলদিয়ার বর্তমান পরিচিতি পাচ্ছে মাছের জন্য। রাজ্যের মানচিত্রে আমুর কার্প, পেংবা, দাক্ষিনাত্যের রুই প্রভৃতি মাছের প্রথম পরিচয় করায় হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তর। হলদিয়ার মাছ চাষিরা পেয়েছেন রাজ্য ও জাতীয় পুরস্কার। এমনকি মহিলারাও মাছ চাষের উদ্যোগে এগিয়ে আসার নজির রয়েছে হলদিয়ায়। আর সেই হলদিয়ায় আর এক অভিনব উদ্যোগ নিল “হলদিয়া ফিশ ট্যুরিজম” ।

No comments