Latest Breaking

চলছে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, উদ্বিগ্ন সুশীল সমাজ


সোমনাথ মুখার্জী, নিউজ্ বেঙ্গল টুডে, কলকাতা : সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনোত্তর পশ্চিমবঙ্গ তীব্র রাজনৈতিক হিংসা, সন্ত্রাস, ধর্মীয় উন্মাদনা সহ সাম্প্রদায়িক বিভাজনের শিকার হয়ে চলেছে। চলছে ধর্মপরায়নতা প্রমাণের তীব্র রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। ফল ভুগছেন সাধারণ মানুষ। চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠায় তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন। এই চলতি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করলেন নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনেরা, এক নাগরিক সভার মাধ্যমে, দক্ষিণ কলকাতার তপন থিয়েটার হলে।
সভায় উপস্থিত বিদ্বজ্জনেরা সম্মিলিত ভাবে ঘোষণা করেন  যে কোনো সংগঠনের আহ্বানে এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বরং বিশিষ্ট কবি শঙ্খ  ঘোষের তাগিদে একত্রিত হয়েছেন সুশীল সমাজ। সভায়  শঙ্খ ঘোষ ছাড়াও স্বক্ষেত্রে সফল বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট শিল্পী অপর্ণা সেন, নাট্য ব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, বিভাস চক্রবর্তী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দেবেশ রায়, সুকান্ত চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী ডঃ বিনায়ক সেন, সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন, স্বপ্নময় চক্রবর্তীরা। সভার মূল  ভাবের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রখ্যাত শিল্পী ওয়াসিম কাপুরের আঁকা মঞ্চের পশ্চাৎপট 'এই মৃত্যু উপত্যকা আমার না' যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী। ওয়াসিম নিজেও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ যার সাক্ষী থাকল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।

আক্ষরিক অর্থে এই সভায় সভাপতিত্ব করবার কেউ ছিলেন না, ছিলেন না কোনো সভা সঞ্চালক বরং প্রবল ভাবে ছিল সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রতিবাদী কন্ঠস্বর।
মূল প্রস্তাবনায় অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন যে ভোটের আগে থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশ জুড়ে। ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হানাহানি সহ উগ্র ধর্মীয় নীতির সঙ্গে দলীয় রাজনীতিকে অভিন্ন করে ফেলে এক চূড়ান্ত অশান্তির আবহ তৈরি করে চলেছে কেন্দ্রের শাসক দল, যার প্রভাব সবথেকে বেশি এই রাজ্যে। এর বিরুদ্ধেই নাগরিক সমাজের অবস্থানগত দায়বদ্ধতা থেকেই তাঁরা একত্রিত হয়েছেন। উপস্থিত বিদ্বজ্জনদের সম্মিলিত বক্তব্যের নির্যাস যা উঠে আসে, স্বৈরাচারী ও দখলদারি  রাজনীতি, একচেটিয়া সার্বিক ক্ষমতা বিস্তারের প্রবণতা যা কর্মক্ষেত্রকে অতিক্রম করে পরিবারেও তার থাবা বসাচ্ছে। স্বাধীন দেশের মুক্ত চিন্তা যা পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংসের চেষ্টা করে চলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সকলেই একমত যে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু ভুল নীতির ফলে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দেওয়ার সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে বিজেপি। প্রগতিশীলতা ও ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতার পাতলা পর্দা সামনে রেখে চলেছে সূক্ষ্ম সাম্প্রদায়িকতার জাল বোনা। দেশভাগের নিদারুণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী বাঙালী হয়তো আগামী দিনে সমাজ ভাগের সাক্ষীও থাকবে।
রুদ্রপ্রসাদ, অপর্ণা সেন, নবনীতা দেব সেন সহ প্রায় প্রত্যেকের বক্তব্যে উঠে এসেছে দেশভাগ-দাঙ্গা-দুর্ভিক্ষ-বাবরি মসজিদ প্রসঙ্গ। উঠে এসেছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম অধ্যায় যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর জ্বালাময়ী বক্তব্যে কৌশিক সেন বলেন, তাঁরাই একদিন রাজ্যে পরিবর্তনের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন। মিছিলে পথ হেঁটেছিল সুশীল সমাজ, কিন্তু সেই পরিবর্তনের সরকারের বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আদপেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন যে,
"সময় এসে গিয়েছে দখলদারির এই ক্ষমতার দম্ভকে 'না' বলবার।" অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তিনি বলেন বর্তমান রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার প্রেক্ষাপটে কোনো দলই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে পারছে না। মুক্তকন্ঠে সকলেই বলেন যে এক্ষেত্রে একদলের হাত থেকে নিস্তার পেতে অন্যদলকে সমর্থন বা তাদের শরণাপন্ন হওয়া আদপেই ঠিক নয়। একইসঙ্গে নিজেদের আত্মসমীক্ষার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করেননি কেউই।
সভার মূল সুরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিল্পী দেবশঙ্কর হালদার পাঠ করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'ক্ষয়' কবিতা।
সভা সূত্রে জানা গিয়েছে যে আগামী দিনে বিভিন্ন জায়গায়  এইরকম সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং বিদ্বজ্জনেরা বর্তমান রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের  কাছে তাঁদের সম্মিলিত বক্তব্য পেশ করবার পরিকল্পনা করছেন।।

No comments