Latest Breaking

R.G Kar নিয়ে উদ্বিগ্ন সারা পৃথিবী, "নীরব" মোদী!

বিশেষ প্রতিবেদন, কলকাতা : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্ভবত ভুলে গিয়েছেন ভারতের মধ্যে  পশ্চিমবঙ্গ নামে একটি রাজ্য আছে ! পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে R.G Kar মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের প্রতিবাদে  সারা দেশ, সারা পৃথিবী প্রতিবাদ মুখর হলেও "নীরব" মোদী!

যেদেশের প্রধানমন্ত্রী সন্দেশখালিতে মহিলাদের ওপর নির্যাতনের মৌখিক অভিযোগ নিয়ে দিনের পর দিন পশ্চিমবঙ্গে এসে ঘন্টার পর ঘণ্টা  ভাষণ দিয়ে গিয়েছেন, সেখানে  R. G kar কাণ্ডে চিকিৎসককে খুন, ধর্ষণ নিয়ে কিভাবে মাসের পর মাস নীরব থাকতে পারেন! এটা ভেবে অবাক হচ্ছেন বাংলার আমজনতা !

 নন্দীগ্রামের এক বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, " আম জনতার যেকোনো গণ আন্দোলনকে প্রথমে গুরুত্ব দিতে চায়না শাসক। পরে যখন বুজতে পারে, তখন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়!" নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, "২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম কাণ্ডের সময় রাজ্যের শাসকদল সিপিম যখন নিরস্ত মানুষের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল, তখনও নীরব ছিল  কেন্দ্র এর কংগ্রেস সরকার। রাজ্যের শাসক দলকে অপকর্ম্ম করার জন্য গোপন মদত দিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী সঠিক সময়ে পাঠানো হয়নি নন্দীগ্রামে ! ফলে প্রায় শতাধিক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়, কয়েক শো মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।"

 জমি আন্দোলনে যুক্ত ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির এক সদস্য বলেন "২০০৭ সালে  নন্দীগ্রামে গণহত্যার সময় রাজ্য সরকারকে যেভাবে কেন্দ্র গোপনে মদত দিয়েছিলো, ১৭ বছর পর R.G kar কাণ্ডে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেটা খুব বেদনার ও উদ্বেগের।"

স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও বলেন " নন্দীগ্রামে গুলিবিদ্ধ অসহায় মানুষদের জন্য দিল্লি থেকে বিরোধীদলের প্রতিনিধি হিসাবে এসেছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি, সুষমা স্বরাজ। নন্দীগ্রামে বিজেপির সেই প্রতিনিধি দলে ছিলেন না নরেন্দ্র মোদী, অমিত সা! নন্দীগ্রাম কাণ্ডের জেরেই রাজ্যে বাম সরকার আর কেন্দ্রে কংগ্রেস  সরকারের পতন হয়েছিল! ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন মোদী! " 

নন্দীগ্রামে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক সবুজ প্রধান দাবি করেন, "নন্দীগ্রাম কান্ড ২০০৭ সালে হয়েছিল, ২০০৯ সালে কংগ্রেস সরকার গড়েছিল। " 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, " ২০০৪-২০০৯ কেন্দ্রে সরকার চালাতে বামেদের সমর্থন নিতে হয়েছিল। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে কেন্দ্রে সরকার গড়েছিল কংগ্রেস। রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

 ২০০৯ সালে আঞ্চলিক দলের সমর্থন নিয়ে কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার গড়লেও, নন্দীগ্রাম কাণ্ডে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্র মদত দেওয়ার কারণে, কংগ্রেসের ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমতে শুরু করে। রাজ্যের পাশাপাশি নন্দীগ্রামে কংগ্রেস অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে!  একারণেই নন্দীগ্রাম কাণ্ডের পর দল পরিবর্তন করতে বাধ্যহন সবুজ প্রধান এর মতো কংগ্রেস নেতৃত্বদের!

লক্ষণ শেঠ বিরোধী এক বাম নেতা জানান, " নন্দীগ্রাম কাণ্ডের সময় নিষ্ক্রিয় কেন্দ্র সরকারের ওপর জনরোষ আছড়ে পড়েছিল, R.G Kar কাণ্ডে একই পুনরাবৃত্তি  হতে চলেছে এটা বুজতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! " তিনি আরও বলেন, " যেকোনো বিল পাস করাতে হলে দুর্বল কেন্দ্র সরকারকে তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলের সমর্থন প্রয়োজন, একারণেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কান্ডারি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পরামর্শের পরিবর্তে  কেন্দ্রে সরকার টেকাতে রাজ্যে তৃণমূল সরকারের গোপন সমর্থন মোদির প্রয়োজন!  ২০০৭ সালে কংগ্রেস সরকার বাঁচাতে একইভাবে রাজ্যে বাম সরকারের অপকর্মকে সমর্থন করেছিল কেন্দ্র। 

R.G kar কাণ্ডে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন চলছে। ডাক্তারদের আন্দোলনকে মানুষ শাসকের বিরুদ্ধে জনতার আন্দোলন হিসাবে দেখছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলন মানুষ মন থেকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু R.G kar কাণ্ডের জেরে আন্দোলনে সমস্ত শ্রেণীর মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন। 

এক আন্দোলনকারী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন " CBI তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট খুশি হলেও, আমাজনতা খুশি নয়। CBI  চার্জসিটে কলকাতা পুলিশ এর তদন্তে মান্যতা দিয়েছে বলে শাসক দল যেভাবে উৎসব পালন করতে শুরু করেছে, এটা সাধারণ মানুষের কাছে উদ্বেগের! "

কলকাতার বাসিন্দারা মনে করেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে চাইলে সময় নস্ট না করে কলকাতাতে  ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে  এসে প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুন। নচেৎ R.G kar কান্ড নিয়ে "নীরব " মোদীর কেন্দ্র সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে!

No comments