ঋষি রাজনারায়ণ বসুর দ্বিশত জন্মবর্ষ বর্ষব্যাপি পালন করবে মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা
মানসী হাজরা, কলকাতা : জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত হিসাবে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর স্মরণ বর্তমানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ।
'রাজনারায়ণ বসু দঃ চব্বিশ পরগনার বোড়ালে জন্ম গ্রহণ করলেও তাঁর কর্মজীবনের মুখ্য ক্রিয়াকলাপ সংগঠিত হয়েছিল মেদিনীপুর জেলা হাইস্কুলের (বর্তমানে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল) প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে (১৮৫১-১৮৬৬)।
এই সময়কালে দেশের অন্যতম প্রথম দিকের গ্রন্থাগার 'বেলা হল লাইবেরী' পতিষ্ঠায় সহায়তা, শ্রমজীবি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বিতর্ক সভা, সাহিত্য উৎসাহিনী সভা, সুরাপান নিবারনী সভা, জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভাসহ আরো নানা সভা সমিতি স্থাপনের মাধ্যমে জাতীয় চেতনা সম্প্রসারণে নব জোয়ার সৃষ্টিতে প্রয়াসী হন। যে কারণে তাঁকে জাতীয়তাবাদের পিতামহ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
মেদিনীপুরে থেকে তিনি এই সকল কর্মকান্ড করেছিলেন বলে তাঁকে 'মেদিনীপুরের রাজনারায়ণ' নামে অনেকেই চিহ্নিত করেন। ওই তথ্য প্রমাণ করে যে উনবিংশ শতকে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদের যে উন্মেষ ঘটেছিল তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল এর মাটিতে। যা মেদিনীপুরবাসী তথা বঙ্গবাসীকে গর্বিত করার মেদিনীপুরের পক্ষে যথেষ্ট।
জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত হিসাবে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর স্মরণ বর্তমানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এই কারণে যে জাতীয়তাবাদের সঠিক ধারনাই মানুষের মনে দেশ প্রেমের অন্তঃসারশূন্য উচ্ছ্বাসের পরিবর্তে স্বদেশবাসীর হিতার্থের কর্মকান্ডে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
এ জাতীয় ভাবনাকে সামনে রেখে ঋষি রাজনারায়ণ এর ঌদ্বিশত জন্মবর্ষে 'মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা মূলতঃ মেদিনীপুর এবং অন্যান্য জেলায় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম জয়ন্তী উদযাপন পরিকল্পনা করেছে। এই উদ্যোগে সামিল করার চেষ্টা হবে প্রধানতঃ স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের। এছাড়া কলকাতায় তাঁর মূর্তি স্থাপন, রাস্তার নামকরণ, নামাঙ্কিত মুদ্রা প্রচলন, ডাক টিকিট প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে।
ঋষি রাজনারায়ণ বসুর জীবনী সম্বলিত একটি পস্তিকা প্রকাশ এবং ঋষি রাজনারায়ণ ও জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিভিন্ন লেখকের রচনা সমৃদ্ধ একটি স্মরনিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অখন্ড মেদিনীপুর জেলা নানা ক্ষেত্রে অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী। একের পর এক গন আন্দোলন, বিদ্রোহের রণধুনিতে শাসক ইংরেজের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল মেদিনীপুর সেই সুদীর্ঘ ইতিহাসে যেমন আছে অত্যাচার নিপীড়ন সহনের করুণ কাহিনী তেমনি আছে প্রত্যাঘাতের অকল্পনীয় / দুর্জয় সাহসের নানা ঘটনার ঘনঘটা, আছে অকুতোভয় আত্মত্ম বলিদানের বীরাঙ্গনা, মৃত্যুঞ্জয়ী বীর বীরাঙ্গনাদের সঞ্জীবনী আখ্যান।
বহু বিষয়ে মেদিনীপুর সারা দেশে ভগীরথের ভূমিকা পালন করেছে। বিপ্লবী আন্দোলনে বোমা তৈরী ব্যবহারে চিন্তাভাবনা অস্ত্র গুরু অগ্নিযুগের হেমচন্দ্র কানুনগো, সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও ক্ষুদিরাম বসু প্রমুখ স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ করেছিলেন এক নতুন মাত্রা। দেশপ্রাণ শাসমলের নেতৃত্বে ট্যাক্স বয়কট আন্দোলন ছিল ভারতবর্ষের মধ্যে ইংরেজ শাসক বিরোধী প্রথম সফল অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন। ভারতবর্ষের আর কোনো জেলায় পর পর তিনজন জেলাশাসক অত্যাচারের কারণে বিপ্লবীদের হাতে নিহত হননি- যা ঘটেছিল মেদিনীপুরের মাটিতে।
আগস্ট আন্দোলন পর্বে সারা ভারতবর্ষের মধ্যে মেদিনীপুর জেলার তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সর্বাধিক সময়-আড়াই বছরের অধিক কাল সমান্তরাল সরকার পরিচালনার কোন অর্জনে সক্ষম হয়েছিল।
এই সন্ধন ঘটনাবলী ইতিহাসের বইতে কম বেশী উল্লেখ থাকার কারণে ডানেকেরই জানা যা উত্তরসূরী হিসাবে আমাদের গর্বিত ও উদ্দীপ্ত করে। ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়নি এমনি আরো বহু তথ্য বা আমাদের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করার উপাদান হিসাবে বিবেচিত হতে পারে তা আমাদের অনেকেরই কাছে অজানা।জেলাবাসীর একক ও মিলিত প্রয়াসে এই অসম্পূর্ণতা দূরীকরণের একান্ত প্রয়োজন।
মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা অখন্ড মেদিনীপুরবাসীর একটি সম্মিলিত প্রয়াস। যার উদ্দেশ্য পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করে অতীত 'ঐতিহ্যের স্বর্ণভেলায়" চেপে বর্তমান প্রজন্মকে উন্নয়নের পথ চিনতে সহায়তা করা। কলকাতার শ্যামবাজার এলাকায় শ্যামপুকুরে সংস্থার চারতলা অফিস ও অতিথি নিবাস- 'মেদিনীপুর ভবন'- সকল মেদিনীপুর বাসীর ঐক্যের প্রতীক।
সংস্থার উদ্দেশ্যে রূপায়ণের অন্যতম কর্মকাণ্ড হল জেলার অপরিচিত ঐতিহ্য গুলিকে চিহ্নিত করে তা সর্বসমক্ষে তুলে ধরার প্রয়াস গ্রহণ করা। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর দ্বিশত জন্ম বর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এই সংস্থা।

No comments