জনগণের রায় 'বাম দিকে' : দাবী সূর্যের
সোমনাথ মুখার্জী, নিউজ্ বেঙ্গল টুডে,কলকাতা : ১৯৭১, চলছে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মরনপন সংগ্রাম। ভারতবর্ষের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিও যথেষ্ট অস্থিরতা মধ্যে দিয়ে চলেছে। সেই সময় বর্তমান যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত, টালিগঞ্জ-নেতাজিনগর অঞ্চলে আধা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রীয় দমন নীতির শিকার হন তরুণ সিপিএম কর্মী কমঃ দুলাল দাস। শহীদ হন তিনি। তাঁর স্মরণে নেতাজিনগরে একটি সভার আয়োজন করে সিপিএম যা একই সঙ্গে বর্তমান ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে, যাদবপুর কেন্দ্রের বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী কমঃ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভা হিসাবেও অনুষ্ঠিত হয়।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক কমঃ সূর্যকান্ত মিশ্র, সংশ্লিষ্ট ৯৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী ও যাদবপুর কেন্দ্রের প্রার্থী কমঃ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। এছাড়াও ফঃ বঃ নেতা কমঃ জীবন সাহা, সিপিআই নেতা কমঃ শুভম ব্যানার্জি প্রমুখ বাম নেতৃত্ব এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
একদা লাল দুর্গ বলে খ্যাত শহরের দক্ষিণ প্রান্তের টালিগঞ্জ-নেতাজিনগর আক্ষরিক অর্থেই এখনো সেই সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছে। চারপাশে লাল ঝান্ডার মাঝে বিপুল কর্মী-সমর্থকদের লক্ষ্য করে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে বক্তব্য রাখেন বাম নেতারা। শুরু থেকে শেষ, কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে পুলওয়ামা-বালাকোট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্য, রেকর্ড ছাড়ানো বেকারত্ব থেকে সাম্প্রতিক বিভিন্ন এলাকায় বাম প্রার্থীদের আক্রান্তের মতো (সর্ব শেষ সংযোজন রায়গঞ্জ কেন্দ্রের মহঃ সেলিম) ইস্যুগুলি নিয়ে একের পর এক তোপ দাগতে থাকেন নেতারা। এই ইস্যুতে সংবাদ মাধ্যমকেও একহাত নেন তাঁরা। অভিযোগের সুরে তাঁরা বলেন যে বামপন্থীদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও গণ আন্দোলনের কথা যথাযথ ভাবে প্রকাশ করা হয় না।
সিপিএম নেতা তথা কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী তাঁর জ্বালাময়ী ভাষণে বলেন যে, সম্পদের অসম বন্টনের ফলে ৭৩ শতাংশ সম্পদ মাত্র ১ শতাংশ মানুষের কুক্ষিগত। তিনি আরো বলেন যে,এই দুই স্বৈরাচারী সরকার যে নব্য পুঁজিবাদের আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছে তাকে প্রতিহত করতে বামপন্থী গণ আন্দোলনই একমাত্র পথ।
সভার মূল বক্তা সূর্যকান্ত মিশ্র ১৯৭৭ সালের নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে এবারের নির্বাচন কোনো মামুলি নির্বাচন নয়। বছরে ২ কোটি চাকরির ভুয়ো প্রতিশ্রুতি, সাম্প্রদায়িক বিভাজন নীতি এবং উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদকে সামনে রেখে এক বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে মোদী সরকার। তাদের দোসর আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে যাওয়া তৃণমূল সরকার। তীব্র শ্লেষাত্নক মন্তব্যে তিনি বলেন যে, শহীদ জওয়ানদের নামে ভোট(পড়ুন ভিক্ষা) চাইছেন প্রধানমন্ত্রী যা অত্যন্ত লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। দৃঢ়ভাবে সূর্যবাবুর দাবী যে এবারের জনাদেশে মোদী সরকারের পতন হবেই এবং আগামী দিনে এ রাজ্যেও ক্ষমতার পালাবদল ঘটতে চলেছে। মানুষ 'বাম দিকে' সরকারের যাত্রাপথ নির্দিষ্ট করে দেবে।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে তুলনা করে এবারের নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে দৃঢ়ভাবে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক বলেন যে, সংসদের অধিবেশনের অন্তিম লগ্নেই কেন পুলওয়ামা হামলা হল বা বলা ভালো হতে দেওয়া হল, সেনা কনভয়ের যাত্রা পথ জঙ্গি সংগঠন জানল কিভাবে এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কেন চাইছেন নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনে জয়লাভ। তিনি আরো বলেন যে যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী গ্লাভস পরে মানুষের সাথে হাত মেলাচ্ছেন, হয়তো বা চাইছেন না মেহনতি জনগণের হাতের ঘাম তাঁর হাতের লাগুক। এই প্রার্থী সংসদে গিয়ে মানুষের কথা কতটুকু বলবেন। বিকাশ সন্দিহান। তিনি বলিষ্ঠ আবেদন রাখেন মানুষ যেন বামপন্থীদের জিতিয়ে সংসদে পাঠান, তবেই সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার তথা দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে। একইসঙ্গে বাংলার যে বামপন্থী আন্দোলনের ঐতিহ্য, তার উপরে ভিত্তি করে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলে মানুষের মুক্তির আন্দোলন জারি থাকবে।।


No comments