তামাকের মতোই ক্ষতিকর, কেন্দ্রের সতর্কতাকে পাত্তা দিলেননা রেলমন্ত্রী! "বন্দে ভারত" যাত্রীদের মেনুতে সিঙ্গারা !
অপরাজিতা ফাদিকার, ভুবনেশ্বর : তামাকের মতোই ক্ষতিকর সিঙ্গাড়া, কেন্দ্রের অধীনস্থ নাগপুর AIIMS এর সতর্কতাকে পাত্তা দিতে রাজী নন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব! বিশাখাপত্তনম- ভুবনেশ্বর "বন্দে ভারত" এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের মেনুতে শনিবার দেওয়া হয় একটি বড় সাইজের সিঙ্গারা !
বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে কর্মরত ইন্ডিয়ান রেলওয়ে অধীনস্থ IRCTC কর্মীরা জানান, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেনু ঠিক করা হয়। মাঝেমধ্যেই টিফিনে সিঙ্গাড়া দেওয়া হয়। বন্দে ভারত এর মত প্রেস্টিজিয়াস ট্রেনে কি খাবার দেওয়া হবে, সেটা রেলমন্ত্রকের অনুমতি নিয়েই করা হয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ নাগপুর AIIMS (অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস) একটি বিশেষ সচেতনতামূলক প্রচারে জানিয়েছে সিঙাড়া, জিলিপি সহ জনপ্রিয় স্ন্যাক্স ধূমপান এর মতোই ক্ষতিকর !
সিগারেটের প্যাকেটের ওপর যেমন সতর্কতা লেখা থাকে, তেমনি সিঙ্গারা, জিলিপী এইসব খাবারে থাকা অতিরিক্ত তেল, চিনি ও ট্রান্স ফ্যাট দীর্ঘমেয়াদে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, সেই সতর্কতা লিখে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাগপুর AIIMS!
নাগপুরের এইমস ক্যাম্পাসে থাকা ক্যাফেটেরিয়া ও পাবলিক ফুড কোর্টে এখন থেকে উজ্জ্বল রঙের ও স্পষ্ট লেখায় সতর্কবার্তা লাগানো থাকবে প্রতিটি ফুড কাউন্টারে। এতে লেখা থাকবে চর্বি, চিনি ও ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা এবং সেগুলো নিয়মিত খেলে কী ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ভারতে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো লাইফস্টাইল রোগ বা অসুখের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এক গবেষণা অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতে ৪৪ কোটি মানুষ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই প্রেক্ষিতে সরকারের লক্ষ্য—সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে, এবং তা শুরু করতে হবে খাবার প্লেট থেকে।
সিঙাড়া বা জিলিপি এগুলো খাবার আগের সাধারণ মানুষ যেন বুঝতে পারেন তাঁরা কী খাচ্ছেন এবং কতটা, সেইজন্যই এই সতর্কবার্তা। এই উদ্যোগ খুব শিগগিরই দেশের অন্যান্য শহর ও প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়বে বলে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষদের আশা—এই ছোট ছোট বার্তাগুলিই একদিন দেশের খাদ্যাভ্যাসে বড় রকমের পরিবর্তন আনবে।
সিঙাড়া-জিলিপি নিয়ে 'সতর্কীকরণ' কে পাত্তা দিতে চাননি পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ আগেই জানিয়েছিলেন, "মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে এধরনের কোনও ফতোয়া মানা হবে না।" তাঁর কথায়, "গুণমান ঠিক থাকলে কে কী খাবে, তাতে বাংলায় হস্তক্ষেপ করা হবে না।"
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার বিজেপি নেতা রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের খাদ্য তালিকা নিয়ে কেন্দ্রের সতর্কতাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। ওড়িশার বাসিন্দাদের প্রিয় খাবার বলেই ভুবনেশ্বর গামী বন্দে ভারত ট্রেনের যাত্রীদের মেনুতে সিঙ্গাড়া দেওয়া হয়েছে!
সিঙ্গাড়া খাইয়ে অবশ্য নিজের জেলার বাসিন্দাদের মন জয় করতে পারেননি রেলমন্ত্রী। এই ট্রেনের এক যাত্রী জানান, "বিশাখাপত্তনম থেকে ভুবনেশ্বর বন্দে ভারত এর পরিষেবা নিয়ে ওড়িশার যাত্রীরা বেজায় চোটে আছেন। দ্রুত গতির এই ট্রেন সবচেয়ে কম গতিতে চলে এই রুটে। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে! লোকাল ট্রেনের মত চলে বলে এই ট্রেন এড়িয়ে চলেন অনেক যাত্রী, এই রুটে একারনেই বেশির ভাগ আসন খালি পড়ে থাকে!"



No comments