ঘূর্ণিঝড় "ডানা"র ঝাঁপটা থেকে রেহাই পেলো বাংলা! চলবে নিম্নচাপের বৃষ্টি
ঋভুব্রত সেনগুপ্ত : ঘূর্ণিঝড় "ডানা"র ঝাঁপটা থেকে রেহাই পেলো বাংলা! ওড়িশার ধামরাতে গতকাল মধ্যরাতে "ডানা"র ‘ল্যান্ডফল’ হয়। তবে ওড়িশা সংলগ্ন বাংলাতে সতর্কতা থাকলেও, ঝড়ের দাপট তেমন ছিলনা। তবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে।
এই সময়ে কলকাতায় ৪২.৭ মিলিমিটার, খড়গপুর এর কলাইকুন্ডায় ৯০.৬ মিলিমিটার, সাগরদ্বীপে ৮৯.৬ মিলিমিটার এবং হলদিয়ায় ৮০ মিলিমিটার , উলুবেড়িয়া ৬৫.৪ মিলিমিটার, মেদিনীপুর ৫২ মিলিমিটার, ঝাড়গ্রামে ৬৬ মিলিমিটার, দিঘায় ৩৭.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ।
ঘূর্ণিঝড় ল্যান্ডফলের সময় সমুদ্রের ঢেউ এর উচ্চতা হতে পারে চোদ্দ ফুট, গতকাল আবহাওয়া দপ্তরের এই সতর্কতার জেরে ইয়াসের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছিলেন দীঘা ,তাজপুর, শংকরপুর, চাঁদপুর ,মন্দারমনি এলাকার গ্রামবাসিরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সমুদ্র সংলগ্ন এলাকার প্রায় লক্ষাধিক গ্রামবাসী বাড়িঘর ছেড়ে দিয়ে কেউ ত্রাণ শিবির, কেউ আত্মীয় বাড়িতে চলেযান।
বছর দুই আগে ২০২২ সালে ইয়াসের সময় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল উড়িষ্যায়।কিন্তু সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। "ডানা"র দাপটে এবার অনেক বেশি শান্ত ছিল বাংলার সমুদ্র।
ইয়াসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রামনগর ১ ব্লকের দীঘা , তাজপুর, চাঁদপুর, শংকরপুর , মন্দারমনি এলাকা। ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্র বাঁধ ভেঙে গিয়ে তালগাছাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এক মাস ধরে এলাকা জলমগ্ন ছিল।
চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় শ্রমিক সুবল দলুই (৬৫) জানান, "সমুদ্রের পাড়ে আমার বাড়ি, ছোটবেলা থেকেই সমুদ্রের অনেক জলোচ্ছ্বাস আমি দেখেছি। কিন্তু ইয়াসের মতো এত ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাস আমার জীবনে কখনো দেখিনি। তবে দিনের বেলায় ইয়াস হয়েছিল বলে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে যেতে পেরেছিলাম। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড় রাতে আসছে। রাতে এই সময় জোয়ার থাকবে, ঢেউ প্রায় 14 ফুট উঁচুতে আসবে বলে শুনছি। এ কারণে ঝুঁকি না নিয়ে সপরিবারে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম , ঝড়ের দাপট কম থাকায় এবার আমরা রক্ষা পেলাম।"
জামড়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় মৎস্যজীবী রাজু দাস (৪৫) জানান, "সমুদ্র থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আমার বাড়ি, ইয়াসে সমুদ্রের জলে আমার বাড়ির প্রায় একতলা ডুবে গিয়েছিল। ইয়াসের স্মৃতি আমাদের কাছে এখনো দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করছে। এবার কোন ঝুঁকি না নিয়ে, রাতে বাড়িতে তালা চাবি লাগিয়ে, কাঁথিতে আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এবার ঝড় থেকে রেহাই পেলেও বৃষ্টিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।"
ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য, জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের পাশাপাশি সেচমন্ত্রী মানুষ ভূঁইয়া এবং মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী গতকাল দিঘাতে এবং মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সারারাত থেকে মনিটরিং করছেন।

No comments